December 3, 2024, 5:21 pm
ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।।
টানা চার দিনের বৃস্টিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও বৃহস্পতিবার ভোর বেলার প্রায় দুই ঘণ্টার প্রবল বর্ষণে পাইকগাছা সহ উপকুল তলিয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ভোর বেলার প্রবল বৃস্টির সাথে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের ঝলকানিতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।মেঘের গর্জন এতোটা তিব্র ছিলো প্রচণ্ড আওয়াজে মনে হয় আকাশ,মেঘ,বিল্ডিয়ের ছাদ ও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ছে।
পাইকগাছায় নিন্মচাপের প্রভাব ও টানা পাচদিনের ভারি বৃষ্টিতে পাইকগাছার নিন্মা ল তলিয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে।বৃস্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূল। বিশেষ করে ভরাকটালের পূর্ণিমায় এমনটি বেশি ঘটছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ উপকূলের নদনদী এখন আর অমাবস্যা-পূর্ণিমার উঁচু জোয়ারের পানি ধারণ করতে পারছে না। পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এতে পুকুর-ঘেরের মাছ ভেসে যাচ্ছে; ফসলহানি ও জমিতে লবণাক্ততা এবং বাড়িঘর ডুবে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিন্ম চাপে পরিণত হওয়ায় মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়ায় উপকূল এলাকার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের ভিতর ও বাইরের শত শত চিংড়ি ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে।রোপা আমনক্ষেত তলিযে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনাবৃস্টি ও অতিবৃস্টি বারবার এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছে। রবিবার সকাল থেকে বৃহষ্পতিবার পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে এলাকায় দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। দিনভর বৃষ্টি থাকায় রাস্তায় যানবহন ঠিকমত চলাচল করেনি। টানা বর্ষণের কারণে দিন মজুররা কাজ করতে পারেনি। এতে সংসারে টানাটানি পড়েছে। তাছাড়া সবচেয়ে বিপাকে পড়েন নিন্ম আয়ের দিন মজুর। সাধারণ মানুষের চলাফেরা এবং দৈনন্দিন কাজকর্ম কিছুটা ব্যাহত হয়। রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নিন্মচাপের প্রভাবে এলাকার নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি ও বৃস্টিতে পানির স্রোতে বাধ ভেঙ্গে গেছে। এতে অনেক এলাকায় ঝুঁকি বেড়েছে।ঝুকিপূর্ণ বাধগুলিতে স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হয়েছে। পৌর বাজার ও রাস্তা তলিয়ে চলাচল ব্যাহত হয়। অনেক নিচু এলাকা পানিতে ভাসছে। বাইশারাবাদ বেড়ীবাধ ভেঙ্গে গেলে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।ভারি বৃস্টিতে বাড়ির উঠান তলিয়ে গেছে।কাচা ঘরবাড়ী ধসে পড়ায সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার চিংড়ি লীজ ঘেরে সদ্য রোপনকৃত আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে।নদীতে ভাটা সরলে পানি নেমে যাবে এতে ধানের কোন ক্ষতি হবেনা বলে জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম্। লীজ ঘের গুলোতে আমন রোপন চলছে।তাছাড়া অন্য সকল ক্ষেত রোপন সম্পন্ন হয়েছে। এই বৃষ্টি লবণাক্ত এ এলাকার আমন আবাদে অনেক উপকার হবে। এলাকায় জোয়ার-ভাটা থাকায় বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি খুব তাড়াতাড়ি নেমে যাবে। এতে করে আবাদের কোন ক্ষতিতো হবে না আরো উপকার হবে।পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রাজু হাওলাদার জানান, এখন পূর্ণিমা ভারিবৃস্টি এবং বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ থাকায় জোয়ারের অতিরিক্ত পানি উপকূলে বেড়ীবাধ উফছে পড়ে বিভিন্ন পোল্ডার প্লাবিত হয়েছে। পাইকগাছায় প্রায় ৩০ কি:মি: বেড়ীবাধ ঝুকিপুর্ণ রয়েছে।তবে বৃহষ্পিতিবারের ভারি বৃস্টি ও জোয়ারে বাইশারাবাদ বেড়ীবাধ ভেঙ্গে গেলে তা মেরামত করা হয়েছে। উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা টিপু সুলতান জানান, ভারী বর্ষণে ২ হাজার ৯২৫টি চিংড়ি ঘের ও পুকুর জলাশয় তলিয়ে গিয়ে একাকার হয়ে যায়। এতে ১ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বীজতলা ও সবজি সহ কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, বিভিন্ন জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করে পানি নিষ্কাসনে খালের অবৈধ নেট-পাটা অপসারণ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তারা স্ব স্ব ইউনিয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।